। শিবানী কর্মকার শিলু ।
জীবনের তাগিদে মানুষকে জীবিকার সন্ধানে ছুটতে হয়। আবার সেই জীবিকাই জীবনের চাইতে মুখ্য হয়ে ওঠে অনেক সময়। জীবিকার নেশা অনেক সময় মানুষকে এমন ভাবে গ্রাস করে বসে যে, জীবিকার কাছে জীবন হয়ে ওঠে গৌন। খেয়ে পরে বেঁচে থাকা ছাড়া জীবনের আলাদা কোনো মানে দাঁড়ায় না।
কিন্তু এমন কিছু মানুষ আছে, যারা একটু ব্যাতিক্রম। তাদের কাছে জীবনের আলাদা একটা উদ্দেশ্য আছে। জীবনের অর্থও তাঁদের কাছে ভিন্ন রকম। যুক্তি দিয়ে, দশর্ন দিয়ে তাঁরা জীবনটাকে নানা দিক থেকে দেখতে চায়। আর তাই সবকিছুর পরও প্রাণের তাগিদে তাঁরা কিছুটা সময় আলাদা করে রাখেন আড্ডার মধ্য দিয়ে চিন্তার আদান প্রদান, আত্মিক চর্চার জন্যে। তাঁরা মনে করেন বোধের পরিচর্যা জরুরী। তাই একই চিন্তা পোষণ করেন এমন কিছু মানুষ মিলিত হন দিনের শেষে, কাজের অবসরে, ঢাকা ইউনিভার্সিটির চারুকলা এলাকায় ছবির হাটে। এখানে মিলিত হন নানা পেশার লোক। শিল্পী, সাংবাদিক, সাহিত্যিক, কবি, সংগঠক, চলচ্চিত্রকার, কিংবা গায়ক বা গীতিকার। এছাড়াও আরও বিভিন্ন পেশার মানুষ জড়ো হন এই আড্ডায়। এখানে যারা আসেন, একরকম প্রাণের আকুতি থেকেই আসেন।
আড্ডা, আলোচনা চলতে চলতেই এক সময় এর নাম করণ হয় ছবির হাট। সময়টা ২০০৩। সময় গড়িয়ে ১১ বছর। এই ১১ বছরে ছবির হাটের কার্যক্রম কখনই থেমে থাকেনি। উপরন্তু সফলতার দিকে এগিয়ে গেছে ক্রমশ। ছবির হাটের বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হলো মোশন-ইমোশন শীর্ষক শিল্প প্রদর্শনী। এর ব্যাপ্তি কাল ছিল ১ ডিসেম্বর থেকে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত। প্রদর্শনীতে নানা ধরনের শিল্পকর্ম স্থান পায়। পেইন্টিং, স্কাল্পপচার, ইন্সটলেশন আর্ট, পারফর্মেন্স আর্ট প্রদর্শিত হয় এ প্রদর্শনীতে। প্রায় ২৮ জন শিল্পী এতে অংশ নেন। কাজের ধরণ ছিল মূলত কনটেম্পোরারি। ছবির হাটের পুরোটা আঙ্গিনা জুড়ে ছিল শিল্পীদের বিভিন্ন শিল্পকর্ম। বলা যায় ছবির হাটে এই ১৫ দিন যথার্ত অর্থে ছবির হাট বসে ছিল। শিল্পী পরিচিতির চাইতে শিল্পের গুরুত্বটাই এখানে প্রধাণ। তাই যে কেউ আত্মবিশ্বাসের সাথে নিজের শিল্পকর্ম নিয়ে এখানে অংশ গ্রহণ করতে পারেন।
তারা গ্যালারি নির্ভর প্রদশর্নীতে আগ্রহী নন। গ্যালারিতে কিছু নির্দিষ্ট মানুষ যায়, যারা শিল্পী, শিল্প বোদ্ধা বা শিল্প প্রেমী। তারা চেয়েছেন সাধারণ মানুষের কাছে শিল্পটাকে পৌঁছে দিতে। তাই তারা প্রদর্শনী চারদেয়ালের মাঝে আটকে না রেখে ছবির হাটে খোলা জায়গায় লোকারণ্যে করেন। প্রতিদিন যেখানে প্রচুর মানুষের সমাগম ঘটে। সাধারণত দেখা যায়, দশর্ক প্রদর্শনী দেখতে যান গ্যালারীতে, এখানে দশর্ক আগেই ছিল, তারা প্রদর্শনীটাকে নিয়ে এলেন দর্শকের মাঝে। শিল্প প্রদর্শনীটাকে বোদ্ধা সমাজে আবদ্ধ না রেখে সাধারণ মানুষের কাছাকাছি নিয়ে আশাটাই এদের প্রদর্শনীর মূল উদ্দেশ্য।
No Comments