। ফারাহ নাজ মুন ।
গ্যালারি এথেনা আটজন প্রতিভাবান শিল্পীর প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে। প্রদর্শনীর শিরোনাম বি স্মার্ট অ্যাবাউট আর্ট। এর শিরোনামটি একটু ভিন্ন রকম। ভিন্নতা দেখতেই ঢুঁ মারা প্রদর্শনীস্থলে। গ্যালারির অবস্থান একটু কোলাহলে ভরা এলাকা হলেও এথেনা গ্যালারির ভেতরের ঢুকতেই মন ভালো হয়ে গেল বেশ গোছানো অভ্যর্থনাস্থল দেখে। প্রদর্শনীর শুরুটা শিল্পী আনিসুজ্জামানের। আনিসুজ্জামান মূলত ছাপচিত্রশিল্পী। ছাপচিত্রাঙ্গনে তাঁর শিল্পকর্ম বেশ প্রশংসনীয় সব সময়ই। আনিসুজ্জামানের জলরঙে আঁকা শিল্পকর্ম ভার্সেস রিটেন থ্রো দ্য ওয়াটার, শিল্পী এখানে জলপথের যোগাযোগের বাহন চিরায়ত বাংলার নৌকাকে বেছে নিয়েছেন। বাংলাদেশে প্রায় ১৫০ রকমের নৌকা রয়েছে। সে নৌকাগুলোর বিভিন্ন আকৃতিকে তিনি তাঁর শিল্পকর্মে তুলে ধরেছেন। শিল্পীর এ জলরঙে আকা ছবি বছর খানেক আগে করা তাঁর একক চিত্র প্রদর্শনী সিরিজের কাজ।
বিপাশা হায়াত বিমূর্ত রীতিতে কাজ করেন। তাঁর কাজের বিষয় নস্টালজিয়া। একই ধাঁচের এ কাজগুলোতে স্থাপত্যরীতির নমুনা পাওয়া যায়। শিল্পীর নস্টালজিয়া লিবিয়াকে ঘিরে। শিল্পী তাঁর শৈশবের একটা বিরাট অংশ কাটিয়েছেন সেখানে। লিবিয়ায় দেখা স্থাপত্যশৈলী তাঁর নস্টালজিয়ায় পেয়েছে আধিপত্য।
নাজিয়া আন্দালিব প্রিমা ও মাকসুদা ইকবাল নীপার নিয়মিত কাজের ধারাবাহিক অংশই প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছে। আশরাফুল হাসান কাজ করেন গাছের শিকড় নিয়ে। শিকড়ের মধ্যে তিনি তাঁর পদ্ধতি ব্যবহার করে আঁকেন। আশরাফুল হাসান খবরের কাগজ আর গাছের সমন্বয় করেছেন তাঁর পেইন্টিংয়ে। খবরের কাগজ আমাদের প্রতিদিনের খবরের ক্ষুধা মেটায়, সেখানে আমরা নানাবিধ খবরের প্রতিবাদের সংবাদ পাই বটে, তবে ওই খবরের কাগজ তৈরি করতে গাছের প্রাণও যায় তা একরকম সবার অগোচরই থাকে।
প্রদর্শনীতে ছিল সিরামিকে করা অসীম হালদার সাগরের ভাস্কর্য। তাঁর ভাস্কর্যে মানুষের অবয়বের পাশাপাশি থাকে নানা রকম বিষয়। এ ছাড়া ছিল বিশ্বজিৎ গোস্বামীর কোয়েস্ট ফর সোল ও পীযূষ কান্তি দাশের দ্য হিডেন এজেন্ডা। প্রদর্শনীর দেখভাল করেছিলেন জিনাত ইকরামউল্লাহ। তিনি তাঁর লেখায় বলেছেন, শিল্পীদের অতীতের কাজের মাধ্যমে তাঁরা ভবিষ্যতের সম্পর্ক তৈরি করবেন। কেননা তাঁর আশা প্রদর্শনীতে অংশ নেয়া শিল্পীরা আরো ক্রিয়াশীল থাকবেন এবং আরও বিকশিত হবেন। তাঁর এ কথা মানলাম কিন্তু আর্টের ব্যাপারে স্মার্ট হতে গিয়ে তিনি কাকে উপদেশ দিচ্ছেন? বা আর্ট সম্পর্কে এ স্মার্টনেসের মানেই বা কী? এই প্রদর্শনী কি দর্শকের জন্য কোনো হুঁশিয়ারি? অন্তত শিরোনামে। কিন্তু শিল্পীরা তো বলেন অন্য কথা, দর্শককেই সেসব শিল্পী ভগবান মেনেছেন। তাঁদের সকল নিবেদন ভগবানের করুণা পাবার আশায়। শিল্পের ভোক্তা ও নির্ণায়ক সেই দর্শককে উপদেশ বিতরণের মধ্য দিয়ে এ প্রদর্শনী কি ঔদ্ধত্য প্রকাশ করল না?
No Comments