[metaslider id=838]
।নুশরাত জাহান। ইতিহাস ঐতিহ্যে ভারতীয় উপমহাদেশের তুলনা মেলা ভার। হাজার বছরের সভ্যতার ইতিহাস এখানে। পৃথিবীর স্বর্গ বলে একসময়ে পরিচিত এই অঞ্চলের প্রতিটি ক্ষেত্রে রয়েছে সমৃদ্ধ অতীত। ফিরে তাকালে দেখা যায় ভারতে মূলত ছিল রাজা মহারাজাদের শাসন। রাজা ও রানীদের জীবনধারার পুরোটাই আভিজাত্যে পরিপূর্ণ থাকত। মাথার চুল থেকে শুরু করে পায়ের নুপুর এমনকি জুতায় পর্যন্ত রত্নে ঠাসা থাকত। হিরা, মুক্তা, সোনা, রূপা, গজমতিসহ নাম না জানা অনেক রত্নের চমক নিয়ে চলাটা ছিল তাদের রাজকীয় ভাবসাবের অংশ।
এসব গহনার কারুকাজ বিশ্লেষন করলে দেখা যায়, হাজার হাজার বছর আগেও ভারতে ছিল নিখুঁত পেশাদার কলার চর্চা। যা আধুনিক যুগে এসেও চমকে দেয় তরুণ ডিজাইনার ও ঐতিহাসিকদের।
এসব গহনার শিল্প ও ঐতিহাসিক তাৎপর্যের কথা বিবেচনা করে দিল্লিতে অবস্থিত দেশটির জাতীয় জাদুঘরে খোলা হয়েছে নতুন একটি গ্যালারি। নাম ‘অলঙ্কার’। এখানে প্রদর্শিত হচ্ছে অন্তত ২৫০ রকমের গহনা, যা ভারতের ঝলমলে অতীতের সাক্ষ্য দেবে। এটি ভারতের সবচেয়ে বড় অলঙ্কারের প্রদর্শিনী। গ্যালারিটি বিশ্বের ফ্যাশন ডিজাইনিং ও ইতিহাসের ছাত্রদের জন্য উন্মুক্ত বইয়ের মত।
উষা বালাকৃষ্ণের তত্ত্বাবধানে ১৫ ক্যাটাগরিতে এসব অলঙ্কারের প্রদর্শন করা হচ্ছে। মহেনজো-দারো, হারাপ্পা থেকে উদ্ধারকৃত রত্নখচিত নেকলেস থেকে শুরু করে দেব দেবীর গহনা সবই রয়েছে এই গ্যালারিতে।
আছে ঝিনুক, হাতির দাঁত, হাড় ও রুপার তৈরি প্রত্যহ পরার গহনা। একই সঙ্গে এখানে দেখা মিলবে মনিমুক্তো খচিত অত্যন্ত নিখুতভাবে সোনার ওপর তৈরি অমূল্য অলঙ্কারের।
চুরি, কালোবাজারিসহ বিভিন্ন কারণে ভারত থেকে মহামূল্যবান এসব রত্ন হারিয়ে যেতে থাকে। বিভিন্ন যুগের সাক্ষী হিসেবে অবশিষ্ট্য আছে অল্প কিছু অলঙ্কার। যার মধ্যে ইন্দাস ভ্যালি ও সিরিকাপ থেকে পাওয়া অলঙ্কারগুলো সবচেয়ে পুরাতন ও দৃষ্টিনন্দন। এসব অলঙ্কারের ডিজাইন প্রমাণ করে চার হাজার বছর পূর্বেও অসাধারণ অলঙ্কার শিল্পিরা ছিলেন। যারা বিভিন্ন পাথর ও সোনা মিলিয়ে এমন সব গহনা তৈরি করতেন যা হাজার বছর টিকে থাকত।
প্রদর্শনীর শুরুতেই চোখে পড়বে ইন্দাস ভ্যালির নেকলেস, যা সোনায় তৈরি। যাতে বসানো রয়েছে তিনটি মহা মূল্যবান মনকা পাথর। মাঝে রয়েছে লাল মুক্তো পাথর এবং এক পাশে চারটি ও অপর পাশে পাঁচটি সবুজ মুক্তো বসানো।
এরপর চোখ পড়বে সিরকাপের রত্নগুলো। ঐতিহাসিক সিরিকাপ গ্রিকো-ব্যাক্ট্রিয়ান সাম্রাজ্যের রাজধানী ছিলো যা বর্তমান পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশ। বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে ব্রিটিশ প্রত্নতত্ত্ববিধ স্যার জন মার্শাল এখানে খোঁড়াখুড়ি চালিয়ে ব্যাপক অলঙ্কারের সন্ধান পান। এই অলঙ্কারগুলো ইন্দো-গ্রিক ও গ্রিকো-রোমান ডিজাইনের ঐতিহ্য বহন করে। এ যুগের তৈরি সোনার ওপর অত্যন্ত ক্ষুদ্র রত্নখচিত কানের দুল ও চুড়ি নজর কাড়বে।
আরেকটি আকর্ষনীয় ক্যাটাগরি হল মোঘল ঐতিহ্য। মোঘল আমলের অলঙ্কারগুলো মূলত মূল্যবান ধাতু, পাথর ও রঙ্গিন পাথর থেকে তৈরি। মোঘল অলঙ্কারের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে তাবিজ। যাতে শয়তানের চোখ, বাঘের থাবা ইত্যাদি আঁকা থাকত যা ক্ষমতার প্রতীক ছিল।
দ্য সারতোরিয়াল স্পল্যান্দোর ক্যাটাগরিতে পাওয়া যাবে উনিশ শতকের মহাজারাদের অলঙ্কার। মহারাজাদের মধ্যে কেউ ভারতীয় বুনিয়াদি কেউ আধুনিক ভারতীয় আবার কেউবা পশ্চিমা সংষ্কৃতির ধারক। তাই অলঙ্কারেও দেখা যায় বৈচিত্র্য। সোনা, হীরা সহ মূল্যবান পাথরের ব্যবহার বেশি লক্ষ্যনীয়।
দেব-দেবীর ক্যাটাগরিতে দামী মুকুট, নেকলেস ও পাগড়ি দেখা যাবে।
হেড টু টো (আপদমস্তক) ক্যাটাগরিতে আছে আগের যুগের নারীদের সর্বাঙ্গে জড়ানো গহনার বাহার। এই সেকশনের মূল নেকলেসের মধ্যে আছে কলাপুরের থুসি এবং রাজস্থানের তিমানিয়া ও হানসালি। চুলের অলঙ্কারগুলো দক্ষিণ ভারতের। পাঞ্জাব ও রাজস্থানের টিকা, রাজস্থানের চটি ও বরলা। লখনৌর ঝুমুর, হিমাচনের চাক, কর্নাটকের বাজুকা, ভারতের বিভিন্ন স্থান থেকে সংগ্রহ করা চুড়ি।
এখানে আরও আছে একটি বৃহৎ আকারের সোনার মঙ্গলসূত্র। যা উনিশ শতকে তৈরি।
অলঙ্কারের মহামূল্যবান ইতিহাসের আরও অনেক নিদর্শন পাওয়া যাবে এই গ্যালারিতে। যা অলঙ্কার শিল্পে ভারতীয় উপমহাদেশের অসামান্য অবদানের কথা স্মরণ করিয়ে দেবে।
গহনা সব কাঁচের বক্সের মধ্যে হলেও এই গ্যালারি ছবি তোলার জন্য উন্মুক্ত। চাইলে কোনও অলঙ্কারের ছবি তুলে নিজে তৈরি করে নিতে পারবেন রেপ্লিকা।
No Comments