[metaslider id=753]
।আবীর মোহাম্মদ শহীদ। ভালোবাসা। শব্দটি একই সঙ্গে বাস্তবতা ও কল্পনার এক অদ্ভুত মিশ্রণ। এটি একটি প্যারাডক্স। এটি একটি ধারণা, একটি যৌগিক বস্তু, যাকে বর্ণনা করা দুরূহ একটি ব্যাপার। এটি অনেকটাই শিল্পের মতো। এর প্রকৃত রূপ বা এর সৃষ্টির রহস্য ভেদ করা একদিক থেকে অসম্ভব; আবার একই সঙ্গে খুবই সম্ভব; বিশেষত যখন এর একাধিক ব্যাখ্যা সামনে চলে আসে আর সবগুলোই সঠিক মনে হয়। তবে ভালোবাসার প্রকৃত স্বাদ পাওয়া যায় তখনই যখন এটি অনুধাবন করা যায় একান্তভাবে। তাই হয়তোবা ভালোবাসার ধারণা, এর উৎপত্তি বা উৎকর্ষ বা বিকাশ, যা-ই বলা হোক না কেন, এ সম্পর্কে বহু শিল্পী ও শিল্পবোদ্ধারা বিভিন্ন সময়ে ও কালে নানা ধারণা দিয়েছেন, নানা মত ব্যক্ত করেছেন। এমনকি এ সম্পর্কে কালে কালে নিজেদের ধারণা অনুযায়ী ভালোবাসাকে নতুনভাবে রূপায়ণও করেছেন। এ থেকে বিভিন্ন সময়ে ভিন্ন ভিন্ন ধরনের ভালোবাসার কথা পর্দার সামনে চলে এসেছে। এভাবেই মাতৃত্বসুলভ অথবা দেশাত্মবোধক ভালোবাসার কথা যেমন এসেছে, তেমনি রোম্যান্টিক বা ভ্রাতৃত্বসুলভ ভালোবাসার কথাও বাদ থাকেনি।
এই অতিসাধারণ কিন্তু অসাধারণ এই অনুভূতির কথাই কীভাবে বিভিন্ন আর্টিস্ট নিজেদের ভাস্কর্যে ও পেইন্টিংসে একই সঙ্গে অনুধাবন ও উপস্থাপন করেছেন তারই একটি বর্ণনা প্রদানের প্রয়াস থাকছে এই লেখার ১০টি বিখ্যাত শিল্পকর্মের মাধ্যমে।
১. ‘লাভ’ – রবার্ট ইন্ডিয়ানা
আমেরিকান পপশিল্পী রবার্ট ইন্ডিয়ানার জনপ্রিয় এই ভাস্কর্যের বিভিন্ন ভার্সন ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। ইন্ডিয়ানাপোলিস মিউজিয়াম অব আর্ট, ফিলাডেলফিয়া মিউজিয়াম অব আর্ট, নিউইয়র্ক সিটিসহ আরও অনেক জায়গায়। এর অরিজিনাল ডিজাইনটি তৈরি করা হয়েছিল মিউজিয়াম অব মডার্ন আর্টের ১৯৬৪ সালের ক্রিসমাস কার্ডের ডিজাইন হিসেবে। বর্তমানে এটি বিভিন্ন আকৃতিতে তৈরি হচ্ছে পপ কালচারের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে।
২. ‘দ্য কিস’ – গুস্তাভ ক্লিমট
১৯০৭ থেকে ১৯০৮। পুরো একটি বছর সময় নিয়ে আঁকা ‘দ্য কিস’ পেইন্টিংটি অস্ট্রিয়ান চিত্রকর গুস্তাভ ক্লিমটের অন্যতম সৃষ্টি। ন্যুড আর্ট ঘরানায় আলিঙ্গনাবদ্ধ এক যুগলের এ পেইন্টিং তৈরি হয়েছে ক্যানভাসের ওপর সোনালি পাতা ও তেল রঙের খেলায়। ভিয়েনার ওস্তেরেইশিসে গ্যালারি বেলভেদ্রেতে সংরক্ষিত আছে এই মাস্টারপিসটি।
৩. ‘ইন দ্য গার্ডেন’- পিয়েরে অগাস্তে রেনয়ের
১৮৮৫ সালে আঁকা এই চিত্রকর্ম এখন সংরক্ষিত আছে রাশিয়ার সেইন্ট পিটার্সবার্গের দ্য হার্মিটেজ মিউজিয়ামে। বাগানের শান্ত সুন্দর পরিবেশে রোম্যান্টিকতার এক অভূতপূর্ব প্রদর্শনী তুলে ধরে আবেশে থাকা এক যুগল ঠাঁই পেয়েছে চিত্রটিতে। এতে প্রেমিকের ভালোবাসাকে একতরফা মনে হয়, যেটি এই চিত্রটিকে কিছুটা ট্রাজিক একটি শেড দিয়েছে।
৪. ‘দ্য কিস’- এডভার্ড মুঙ্ক
এক্সপ্রেশনের ওপর নির্ভর করা অত্যন্ত নাটকীয় এবং ‘মুডি’, একটি পেইন্টিং মুঙ্কের ‘দ্য কিস’। দ্য মুঙ্ক মিউজিয়ামে দেখতে পাওয়া যাবে পেইন্টিংটি।
৫. ‘দ্য কিস’- অগাস্টে রদ্যা
ভাস্কর অগাস্টে রডিন ১৮৮৯ সালে মার্বেলের ভাস্কর্যে বন্দী করেন ‘চুম্বন’ থিমটিকে। ভাস্কর্যটি বর্তমানে প্রদর্শিত আছে প্যারিসের মিউজে রডিন-এ। এ ছাড়া কোপেনহেগেনে কার্লসবার্গ গ্লিপ্টোটেক এবং প্যারিসের টিলারিস গার্ডেনে এটির দুটো কপি সাজানো আছে। এর একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো প্রথমাবস্থায় এটি কন্ট্রভার্শিয়াল পেইন্টিং হিসেবে জনসাধারণের দর্শনের জন্য বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছিল। কারণটি ছিল এর অত্যধিক যৌনাবেদনময়তা।
৬. ‘ড্যান্স ইন দ্য কান্ট্রি’- পিয়েরে অগাস্তে রেনুয়ার
আবারও ফিরে আসছি। পিয়েরে অগাস্তে রেনুয়ারের কাছে, তবে এবার তার আরও একটি বিখ্যাত শিল্পকর্ম ‘ড্যান্স ইন দ্য কান্ট্রি’ নিয়ে। ১৮৮৩-তে চিত্রিত তেলচিত্রটির মূল ফোকাস এক নৃত্যরত যুগলের ওপর, যারা একই সঙ্গে সংগীতে ও একে অন্যের মাঝে হারিয়ে একাকার। এটি মূলত ফুটিয়ে তুলেছে অগোছালো টেবিল ও ফেলে রাখা একটি হ্যাট। পেইন্টিংটি প্যারিসের মিউজে ডি’অরসেই মিউজিয়ামে দেখা যাবে।
৭. ‘ল্যে প্রিন্টেম্পস (স্প্রিং)’- পিয়েরে অগাস্টে কট
দোলনায় ঝুলন্ত এক তরুণ যুগলের বসন্ত বিলাস্কে কট চির-অমর করে তুলেছেন তার ১৮৭৩ সালে তেলরংয়ে আঁকা এ ছবিতে। ছবিটি মূলত তরুণ বয়সের ভালোবাসাকে নিয়ে গড়া, যেখানে বেশ কিছু বিষয় বোঝানো হয়েছে কিছু অসাধারণ সিম্বলিজমের মাধ্যমে। এখানে মেটাফর হিসেবে প্রকৃতির ও জীবনের পুনর্জন্মকে ফিরিয়ে নিয়ে আসা কিছু অবজেক্টকে ফোকাসে আনা হয়েছে। যেমন প্রজাপতি, ফুল ও পানি। অন্যদিকে এতে যে ঘন বন দেখানো হয়েছে, তা সিম্বলাইজ করে গোপনীয়তার আধার। মূলত এই পেইন্টিংটি বসন্তের সঙ্গে জীবন ও প্রকৃতির পুনর্যৌবনের যোগসূত্রের একটি অসামান্য চিত্রকর্ম। নিউইয়র্ক সিটির মেট্রোপলিটন মিউজিয়ামে দেখতে পাবেন এই অসাধারণ শিল্পকর্মটি।
৮. ‘রিটার্ন অব দ্য প্রডিগ্যাল স্যন’- রেমব্রান্ট
বাইবেলের সেই সুপরিচিত প্যারাবল অব দ্য প্রডিগ্যাল স্যনের রেমব্রান্ট ভার্সন বলা যায় এই তেলচিত্রকে। সন্তানের প্রতি বাবার নিঃস্বার্থ ভালোবাসার চিত্র ফুটে উঠেছে ছবিটিতে। ছবিটির আরও কিছু বিশেষত্ব হলো এটি রেমব্রান্টের মৃত্যুর ঠিক দুই বছর আগের গড়া এবং একেই শিল্পবোদ্ধারা তার শ্রেষ্ঠতম কাজের অন্যতম হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন। সেইন্ট পিটার্সবার্গের হার্মিটেজ মিউজিয়ামে পাওয়া যাবে এই চিত্র।
৯. ‘দ্য লাভার্স’- রেনে ম্যাগ্রিটে
ফরাসি ‘সুররিয়ালিস্ট’ ম্যাগ্রিটের আঁকা ছবিটিতে পর্দার আড়ালে চুম্বনরত এক যুগল দৃশ্যমান। প্রতীকী এ ছবিটিতে পর্দা ব্যবহারের কারণ সম্পর্কে বিভিন্ন বোদ্ধারা বিভিন্ন মত দিলেও অধিকাংশই মনে করেন চিরাচরিত ‘লাভ ইজ ব্লাইন্ড’ থিওরিটি প্রতীকী উপস্থাপন এই পর্দা। নিউইউর্কের মিউজিয়াম অব মডার্ন আর্টে রয়েছে ১৯২৮ সালে আঁকা এই শিল্পকর্ম।
১০.‘সিয়েস্তা’- ভ্যান গঘ
জাঁ ফ্রাঙ্কোইস মিলেতের ‘এচিং’ আদলে আঁকা ভ্যান গঘের এ ছবিতে ভরদুপুরে খড়ের গাদায় ঘুমন্ত এক যুগলকে দেখা যায়। এটি যেমন একই সঙ্গে তরুণ বয়সের ভালোবাসার একটি প্রতীকী চিত্র, তেমনি এতে করে গ্রামীণ, অকৃত্রিম ভালোবাসার কথাও বোঝানো হয়েছে। এতে আর্টিস্টের তুলির আঁচড়গুলো অনেকটাই আলতো করে দেওয়া, যেটা ধারণা দেয় যে এর দ্বারা ভ্যান গঘ শান্ত একটি পরিস্থিতিকে ধরে রাখতে চেয়েছেন। প্যারিসের মিউজে ডি’অরসে তে পাওয়া যাবে ভ্যান গঘের এই অসাধারণ সৃষ্টি।
No Comments