মিজানুর রহমান।
লেবানন ও ইরাকের ইসলামিক স্টেট জঙ্গিরা ধর্মের নামে ইরাক ও সিরিয়ার প্রাচীন নিদর্শনগুলোকে ধ্বংস করছে। সম্প্রতি ইরাকের মসুল জাদুঘরের আইএসএইএলের জঙ্গিরা প্রাচীন ভাষ্কর্যে ভাংচুর চালায়। ইরাকের অ্যাসিরিয়ান সভ্যতার শহর নাইনবাহ ও নিমরুদের ভবনগুলোকে কয়েকবার ভেঙ্গেছে তারা। শুধু যে ভাঙ্গছে তাও নয়, কিছু কিছু ভাষ্কর্যকে তারা কালোবাজারে বিক্রি করে দিচ্ছে।
দুশ্চিন্তায় পড়েছেন প্রত্নতত্ত্ববিধদরা। একজন মনে করেন, এই কাজগুলো খুবই মর্মান্তিক। জঙ্গিরা আমাদের সবার বিশেষ করে ইরাক ও সিরিয়ার মানুষদের ঐতিহ্যকে ধ্বংস করছে। এটা একেবারেই ছোট বিষয়ে নয়।
তবে পুরাকীর্তি ধ্বংসের ঘটনা নতুন নয়। বরং আইএসআইএলের এসব ধ্বংসযজ্ঞ অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় কারণে চলে আসা দীর্ঘ ধ্বংসযজ্ঞের ধারাবাহিকতা মাত্র। খ্রিস্টের জন্মের ৭০০ বছর পূর্বে অ্যাসিরিয়ানরা ব্যবিলনে ব্যপক লুটপাট ও ভাংচুর চালায়। মধ্যযুগে ইংল্যান্ডের খ্রিস্টানরা অ্যাভবুরির কিছু প্রাচীন পাথরের স্তম্ভ ফেলে দেয়। যুদ্ধ জয়ের পর স্পেনের রাজারা প্রাচীন নিদর্শন সোনার স্থাপনাকে গলানোর প্রামান রয়েছে, যার মধ্যে ইনকা সভ্যতার মূল্যবান নিদর্শন সোনার তৈরি বাগান অন্যতম।
প্রত্নতত্ত্ববিধদের সতর্কতা সত্ত্বেও দ্বিতীয় গালফ যুদ্ধে ৫ হাজার বছর পুরাতন নিদর্শন ধ্বংস করা হয়। এমনকি ইরাকে মার্কিনীদের উপস্থিতির সময়কালেও বিভিন্ন যাদুঘর থেকে চুরি ও হারানো গেছে অনেক প্রাচীন নিদর্শন।
মুনাফার লোভে লুটপাট ও চুরি নতুন কিছু নয়। বেনিয়া, চোর ও জঙ্গিরা তো করেই এমনকি প্রত্নতত্ত্ববিধরাও এই কাজের জন্য কিছু অংশে দায়ী। এক অঞ্চলের নিদর্শন তুলে অন্য অঞ্চলে নিয়ে যাওয়া তাদের জন্য নতুন কিছু নয়। আমেরিকা, ইউরোপের বিভিন্ন বড় বড় যাদুঘর এশিয়া, আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়ার নিদর্শনে ঠাসা। এক অঞ্চল থেকে উদ্ধার করে উদ্ধারকারীরা তা নিয়ে যাচ্ছে অন্য অঞ্চলে। যা ওই অঞ্চলের ইতিহাস ঐতিহ্যের রক্ষার্থে যে দেশ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে সেখানেই রাখা উচিৎ।
তবে আইএসআইএলের ধ্বংসযজ্ঞ সবকিছু ধ্বংস করতে পারেনি বলেই মনে করেন অনেক বিশেষজ্ঞ। তারা আশা করছেন এই পরিস্থিতি শান্ত হলে তারা এর ধ্বংসাবশেষ সংরক্ষণের কাজে নেমে পড়তে পারবেন। এর লক্ষ্যে এখন থেকেই ক্ষতিগ্রস্থ হওয়া ও ঝুঁকিতে থাকা পুরাতন নিদর্শনের তালিকা করছেন তারা।
No Comments