।নূসরাত জাহান।
পশ্চিমা শিল্পের পুরোধা বলা হয় যাকে, রেনেসাঁ মানবের টাইটেল নিয়ে যার সঙ্গে কাছাকাছি ব্যবধানে লড়াই হয় লিওনার্দো দা ভিঞ্চির সঙ্গে, সেই মিকেলেঞ্জেলোর বেশির ভাগ ব্রোঞ্জ ভাস্কর্যই অক্ষত নেই! টিকে আছে দুটি মাত্র! আর ওই দুটো নিয়েই প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে কেমব্রিজের ফিৎজউইলিয়াম মিউজিয়াম। গত মঙ্গলবার থেকেই মিকেলেঞ্জেলোর সুপ্ত ওই শিল্পকর্ম দেখার সুযোগ পাচ্ছেন সবাই।
চিতা বাঘের ওপর সাহসী ও পুরুষালি দুই বীর। দুজনই নগ্ন। কেমব্রিজ বিশারদদের ধারণা, এক মিটার উচ্চতার ভাস্কর্য দুটিই মাস্টারের নিজ হাতে গড়া। ‘ডেভিড’ বানানোর পরপরই এ দুটোয় হাত দিয়েছিলেন ওই জিনিয়াস শিল্পী।
এখনো ‘ধারণা’ বললেও আগ্রহের কমতি নেই। যেন শিল্পকর্মগুলোর সঙ্গে মিকেলেঞ্জেলোর সংস্পর্শ থাকলেই বর্তে যান ভক্তরা!
এক ব্রিটিশ নাগরিকের সংগ্রহে ছিল চিতার পিঠে বসা দুই বীরের ভাস্কর্য। মিকেলেঞ্জেলোর এক শিষ্যের আঁকা স্কেচের সঙ্গে হুবহু মিলে যায় এগুলো। স্কেচটি আছে ফ্রান্সের মুসি ফেবার নামের একটি জাদুঘরে। ধারণাটা পাকাপোক্ত এ কারণেই।
এর আগে নিউট্রন পরীক্ষায় নিশ্চিত হওয়া গিয়েছিল যে শিল্পকর্ম দুটি ষোড়শ শতকের প্রথম দশকে তৈরি। এ ছাড়া ইউনিভার্সিটি অব ওয়ারউইকের ক্লিনিক্যাল এনাটমিস্ট প্রফেসর পিটার আব্রাহামসের গবেষণায় বেরিয়ে এসেছিল, ভাস্কর্য দুটির প্রতিটি ডিটেইল মিকেলেঞ্জেলোর স্টাইলের সঙ্গে মিলে যায়- পুরুষালি শরীরের সিক্স প্যাক থেকে নাভি পর্যন্ত। ভাস্কর্যগুলোর শরীরের গঠন শতভাগ ‘ডেভিড’-এর মতোই। অর্থাৎ গবেষকেরা প্রায় নিশ্চিত যে মিকেলেঞ্জেলো নিজ হাতে এগুলো তৈরি করেছিলেন ১৫০৬ থেকে ১৫০৮ সালের মধ্যে। হয়তো কাজ শুরুর আগে কোনো এক শিষ্যকে দিয়ে স্কেচ চূড়ান্ত করে নিয়েছিলেন কিংবা তারা আগ্রহী হয়েই ওই ভাস্কর্যের স্কেচ টুকে নিয়েছিল।
১৯৫৭ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত ভাস্কর্য দুটি চোখের আড়ালেই ছিল। পরে ২০০২ সালে এক ব্রিটিশ সংগ্রাহক এগুলোকে সোদবির নিলামে নিয়ে আসেন।
মিকেলেঞ্জেলোর আরও বেশ কিছু নামকরা ব্রোঞ্জ ভাস্কর্য ছিল। বিখ্যাত সৃষ্টি ডেভিডের একটি ব্রোঞ্জ মূর্তি (মূলটির দুই-তৃতীয়াংশ সাইজ) তৈরি করেছিলেন একটি ফরাসি রাজকীয় ভবনের জন্য। ফরাসি বিপ্লবের সময় ওটা হারিয়ে যায়। আর পোপ জুলিয়াস দ্বিতীয়র ব্রোঞ্জ ভাস্কর্যটি ধ্বংস হয়ে যায় বোলগনিজ বিদ্রোহীদের গোলার আঘাতে।
সূত্র: গার্ডিয়ান
No Comments