[metaslider id=895]
।ফারাহ নাজ মুন। সময়কে ধরে রাখার প্রয়াস কিংবা সময়ের সঙ্গে শিল্পকর্মের সূত্রিতা নিয়ে বেঙ্গল গ্যালারি অব ফাইন আর্টসে হয়ে গেল তিনজন তরুণ শিল্পীর দলগত প্রদর্শনী। সমাজ, রাজনীতি, পরিবেশ আর পরিচয়ের নানা সংকট নিয়ে শিল্পীদের নিরীক্ষাধর্মী কাজ নিয়ে দ্য প্যারাডক্সিক্যাল নাও।
ফিরোজ মাহমুদ কাজ করেন উপনিবেশকালীন বিষয় নিয়ে। তাঁর কাজে নবাব, ঘোড়ার প্রাধান্য থাকে। সেরকমভাবেই ফিরোজের ‘ডিসট্যান্স অব দ্য পাস্ট’ শিরোনামের চিত্রকর্মগুলোতে উজ্জ্বল রঙে তিনি এঁকেছেন উপনিবেশকালীন নবাবদের দুর্ভাগ্য ও ইংরেজদের কাছে পরাজয়ের কাহিনি। কাগজে আঁকা শিল্পকর্মগুলোতে ছিল ব্লক প্রিন্টের ছাঁচের ছাপ।
‘ডিসট্যান্স অব দ্য কার্ভিং পাস্ট’ শিরোনামের কাজগুলোতেও একই কথা বলেছেন তিনি, কাঠের ওপর খোদাই করে প্রতœতাত্ত্বিক রেশ এবং তার সঙ্গে অতীত রোমন্থনের বিষয়ের সাজুয্য তৈরি করেছেন শিল্পী। ফিরোজ মাহমুদ তাঁর কাজের ধরন পাল্টানো সম্পর্কে বললেন, ক্লাসিক্যাল প্র্যাকটিস আমাদের দেশে খুবই সাধারণ একটি বিষয়। আমি ইউরোপ ভ্রমণ করে আসার পর আমি আমার কাজের ধরন পাল্টিয়েছি। আমি এখন আমার কাজের ধরনে মিথ, জাতীয়তাবাদ, ইতিহাসকে গুরুত্ব দিচ্ছি।
আনিসুজ্জামান এঁকেছেন বর্তমানের সংকট ও সংঘাতকে। কিছুটা বিমূর্ত হলেও সহজেই বোঝা গেল তিনি কী বলতে চান। একটি চিত্রে দেখা গেল মানুষের সন্ত্রাসে মানুষের মৃত্যু ও যন্ত্রণার বয়ান। সাদা-কালোতে করা ক্যানভাসে নিখুঁত ড্রয়িং স্পষ্ট।
মানুষের দাঁতালো মুখের ওপর ময়ূর বসে আছে বেশ সুন্দর ভঙ্গিমায়। তার ভেতর রয়েছে বারকোড। ভোগবাদে মত্ত মানুষের শরীরে তিনি এঁকে দিয়েছেন বারকোড।
ইয়াসমিন জাহান নূপুর স্থাপনা আর ড্রয়িং দুই মাধ্যমে কাজ করেছেন। কাঠের তৈরি ছোট দালানের খন্ডাংশ, যা নবাব আমলে করা দালানের সঙ্গে মিল রেখে করেছেন। ফিরোজ মাহমুদের নবাবের পেইন্টিংয়ের পাশে ছিল গোল্ডেন গেট শিরোনামে করা ছোট একটি স্থাপনা। স্থাপনাগুলোর দরজা, জানালার বিভিন্ন অংশ মুড়ে দিয়েছেন সোনালি কাগজ দিয়ে। নবাবদের স্বর্ণযুগ স্মরণ করানোর একটি প্রয়াস এখানে লক্ষণীয়। এ ছাড়া জামদানি কাপড়ের ওপর জামদানি বুননে লেখা ছিল almost of everything I was recollecting so many things. So many faces. So many injustice and sins. Even not being able call the god as the god made me pondering.
কাপড়ের ওপর স্থাপনা/ইনস্টলেশন করা প্রসঙ্গে নূপুর বললেন, ‘আমার বেশির ভাগ ইনস্টলেশনের কাজ কাপড়ে করা। এখন আমি জামদানির ওপর করছি, যা সম্পূর্ণ হাতে তৈরি কাপড়। জামদানির ঐতিহ্যের কথা আমরা সবাই-ই জানি। আমি যখন এ কাপড় ব্যবহার করি, সেই সঙ্গে আমি সেই সম্প্রদায়ের সঙ্গে বেশ ঘনিষ্ঠও হই এবং তাদের সঙ্গে কাজ করি। এতে করে আস্তে আস্তে হারিয়ে যাওয়া শিল্পগুলো তাদের হারানো বিশ্বাস ফিরে পাওয়ার প্রেরণাও পায়।’
সত্যের ধাঁধাময় উপস্থিতি, অঙ্কনরীতির সারল্য বা সরলতা- এই তিন শিল্পীর চিন্তার জগৎকে করেছে একাত্ম। এই একাত্মতাই উপস্থাপন করেছে এই সময়ের স্ববিরোধী বাস্তব চিত্র।
No Comments