নূসরাত জাহান
প্রতিযোগিতাটা ছিল সময়ের সঙ্গে। আর প্রত্নতাত্ত্বিকদের দাবি, এ লড়াইতে তারাই জিতেছেন।
সময়টা ছিল গত বছরের অক্টোবর। পানিতে ধীরে ধীরে তলিয়ে যাওয়ার পথে গ্রিসের প্রাচীন শহর জিউগমা। ইউফ্রেটিস নদীর বাঁধটাই যত নষ্টের গোড়া। ওটা নাকি কয়েক বিলিয়ন ডলারের প্রজেক্ট। আর তার কারণে প্রতিদিন পানির উচ্চতা বাড়ছিল এক ফুট করে। নিশ্চিত বন্যার মুখে জিউগমা। অথচ নগরীর তলায় তখনও পড়ে আছে হাজার বছরের পুরনো মোজাইক। হাল ছেড়ে দেননি প্রত্নতাত্ত্বিকরা। ৫০ জনের বিশাল দল মিলে রাত দিন খুঁড়তে লাগলেন। সময়মতো সবগুলো সম্পদ তুলে আনলেন মাটির ওপর। অভিযাত্রীদের ভাষায় ওটা ছিল স্মরণকালের সেরা প্রত্নতাত্ত্বিক উদ্ধার মিশন।
এই জিউগমাতেই আছে বিশ্বের সবচেয়ে পুরনো ও সবচেয়ে বড় (এবং সবচেয়ে প্রাচীন) মোজাইক শিল্প। গ্রিকরা এ নগরীর পত্তন করেছিল ৩০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে। একসময় যা পরিণত হয় রোমান সেনাদের সদরদফতরে। মধ্যযুগ পর্যন্ত এটা একটা সমৃদ্ধ নগরী হিসেবেই চেনা ছিল বাকি দুনিয়ার কাছে।
“ইউফ্রেটিসের তীর ও মেসোপটেমিয়ার দৈনন্দিন জীবনের অনেক গল্পই মাটিচাপা পড়ে আছে এই জিউগমাতে।” এবিসি নিউজকে এ কথা বলেছিলেন জিউগমার গাজিয়ানতেপ মিউজিয়াম ও উদ্ধার অভিযানের পরিচালক কেমাল সেরতোক। তার মতে জিউগমার মাটির তলা থেকে বের করে আনা মোজাইকগুলোই দুনিয়ার সবচেয়ে সুন্দর মোজাইক। অবশ্য এতদিন ধরে মাটির তলায় পড়ে থাকার পরও ওগুলো যেমন চকচক করছিল, তাতে কেমালের কথাকে মোটেও অত্যুক্তি মনে হবে না।
২০০০ সালের আগ পর্যন্ত জিউগমা পানির তলাতেই ছিল। পরে এটাকে খনন করার একটা প্রজেক্ট হাতে নেওয়ার পর পাওয়া যায় এর রত্নভাণ্ডারের হদিস। সন্ধান মেলে ছোটবড় প্রায় ২০০০টি বাড়ির। একসময় যেগুলো মুখর ছিল ৮০ হাজার বাসিন্দার পদচারণা। এখনও জিউগমার তলায় বেশ কটি বাড়ি আছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। অনুমান করা হয় বাড়ির সংখ্যা ২৫-এর কম নয়। তবে ২০০৫ থেকে এ পর্যন্ত যেহেতু খোড়াখুড়িতে ৭০ লাখ লিরা খরচ হয়ে গেছে, তাই আশা করা যায় সহসাই থেমে যাবে না জিউগমার উদ্ধারকাজ। পানি সেচে হলেও মুক্তো তুলে আনবেন গ্রিক প্রত্নতাত্ত্বিকরা। বেরিয়ে আসবে মেধা, সংস্কৃতি ও শিল্পের আবহে বেড়ে ওঠা প্রাচীন গ্রিসের এক অনন্য অধ্যায়।
No Comments